জীবদ্দশাতেই হয়তো দেখে যাবো একদিন এই ধর্ম-উম্মাদের দল আমাকে টাখনুর উপর কাপড় পরতে বাধ্য করবে। আমার ইচ্ছা-অনিচ্ছা, ব্যক্তিগত সৌন্দর্যবোধ, যুক্তিতে তাদের কিছু যাবে আসবেনা।
এই মতাদর্শটাই এমন। হাজারো যুক্তি দিয়ে যদি বলি টাখনুর উপর কাপড় পড়লে বিশ্বসভ্যতা, মানবতা বা ব্যক্তির কি লাভ আর নিচে পড়লে কি ক্ষতি-আমি কেন এটা মানতে বাধ্য, তাদের কিছু যাবে আসবে না তাতে। ধর্মে এটা হারাম- এই এক কথার বাইরে তাদের আর কোন যুক্তির প্রয়োজন পড়ে না।
সে হারাম মানা না মানা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার অতটুকু বলার ক্ষমতা কোন ইসলামী রাষ্ট্র প্রজাকে কখনই দিবে না।এই যে বর্তমান বাংলাদেশ যেখানে ইসলামী শাসন এখনো কায়েম হয় নাই, যার একটা সংবিধান আছে, নিজস্ব আইন কানুন আছে- সেখানেও এটা করা যাবে না ওটা করা যাবে না, এটা হারাম ওটা হারাম সেসব ফতোয়া শুরু করে দিয়েছে কথিত জ্ঞানী (আলেম) রা।
তারা কেন জ্ঞানী, কিসের জ্ঞানী সে উত্তর আমি কখনো খুজে পাইনা।
আর এই জ্ঞানীদের মুখ দিয়ে যেটা বের হয় সেটাকে কায়েম করার জন্য প্রস্তুত আছে মগজহীন বিরাট একটা গোষ্ঠী। কোন নারী যদি তার মুখ ঢাকতেইচ্ছুক না ও হয় তবুও তাকে বোরখা পড়ানো হবে। অন্য মুসলিম দেশে ভাস্কর্য আছে তো কি হয়েছে- এরকম রেডিক্যাল যাদের অবস্থান তারা ষোল আনাই বুঝিয়ে দিবে আফগানিস্তানী ইতর জীবনের স্বাদ।
আইএসও তাদের অধিকৃত এলাকায় ইয়াজিদি নারীদেরকে গণিমতের মাল হিসাবে ব্যবহারের পাশাপাশি অন্যদেরকে বোরখা পড়াতে বাধ্য করেছিল। এসবই তারা করেছিল ধর্মীয় পুস্তক থেকে রেফারেন্স সহকারে হালাল-হারামের নাম দিয়ে। পতনের পর সেই নারীরাই আবার বোরখা পুড়িয়ে তাদের স্বাধীনতা উদযাপন করেছিল।হালাল-হারামের উপরে কোন কথা বলা যায় না, কোন যুক্তি দেয়া যায় না। যদিও ইতিহাস সাক্ষী সময়ের প্রয়োজনে অনেক ফতোয়া পরাভূত হয়েছে। টিকতে না পেরে জ্ঞানীদের কথিত হারাম পরে হালাল হয়ে গিয়েছিল।
এক সময় রক্তক্ষরণে মৃত্যু পথযাত্রী রোগীর শরীরে রক্ত সঞ্চালন (নষড়ড়ফ ঃৎধহংভঁংরড়হ) নিষিদ্ধ ছিল, নারীদের পুরুষ ডাক্তার দেখানো নিষিদ্ধ ছিল, জমিতে পানি দেয়া খোদার উপর খোদকারী হিসেবে বিবেচিত হতো, ইংরেজি শিক্ষা হারাম বলে মুসলিমদেরকে পিছিয়ে রাখা হয়েছিল- সেইসব গোয়ার্তুমি সময়ের বিচারে টিকে নাই এসব নিয়ে তাদের কোনো আত্মসমালোচনা, শিক্ষা, অন্তর্দৃষ্টি বা লজ্জা নেই, বরং নতুন নতুন হারামের লিস্ট নিয়ে তারা হাজির।
কোন দেশ একবার আফগান হয়ে গেলে তা থেকে মুক্তি মিলবে না সহজে।একের পর এক তাদের সব দিয়ে দিতে হচ্ছে। কলিজা ভুনা করে দিলেও বলছে লবন কম হয়েছে। যে হারে তারা শক্তি সঞ্চয় করছে, কারো বাধার সম্মুখীন না হয়ে উল্টো আস্কারা পাচ্ছে- আফগানিস্তান সমাসন্ন।যে চেতনার নেতাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব ছিল এ থেকে দেশকে রক্ষার, তারাই সবচেয়ে বড় নাফরমানিটি করেছে এবং করে যাবে জাতির সাথে।
পরাজয়ের এ ক্ষণে একটাই প্রার্থনা, টাখনুর উপর কাপড় পরতে বাধ্য হবার দিনগুলো আসা পর্যন্ত যেন বেঁচে না থাকি। মূর্খদের আদেশ নির্দেশ মেনে চলার মতো অসম্মানের চেয়ে পৃথিবীতে বেঁচে না থাকাটা অনেক সুন্দর।